যোগাযোগ করুন

০১৯৮৮৮৯৯৯৩৬

শনিবার -শুক্রবার

সকাল ৯টা - রাত ৯টা

দেহে কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়?

দেহে কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়?

ডায়াবেটিস, একটি অতি পরিচিত রোগ যা বর্তমানে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করছে। এই রোগটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, ঠিক কোন কারণে বা কোন হরমোনের অভাবে আমাদের শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধে?

আজকের ব্লগে আমরা সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। জানব, দেহে কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয় এবং এর পেছনের কারণগুলো কী কী?

কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়?

ডায়াবেটিস রোগের মূল কারণ হলো ইনসুলিন হরমোনের অভাব। কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়? এই প্রশ্নের উত্তর হলো ইনসুলিন। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ থেকে নিঃসৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা দেহে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এটি রক্ত থেকে গ্লুকোজকে দেহের কোষে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে, যেখানে গ্লুকোজ শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যখন দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয় বা কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বোঝা যায় যে, ইনসুলিন ছাড়া দেহে গ্লুকোজ সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

ইনসুলিন ছাড়াও অন্যান্য কিছু হরমোন যেমন গ্লুকাগন, অ্যামাইলিন এবং ইনক্রেটিনস (GLP-1 এবং GIP) দেহে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তবে ইনসুলিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সরাসরি কোষে গ্লুকোজ প্রবেশ করানোর কাজ করে। রক্ত থেকে দেহের অধিকাংশ কোষে গ্লুকোজ গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এই ইনসুলিন নামক হরমোনটি। সুতরাং কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়? উত্তর হলো ইনসুলিন। এর ঘাটতি বা কার্যক্ষমতার অভাব সকল ধরনের বহুমূত্ররোগে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

ইনসুলিনের অভাবে দেহে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস নামে একটি জটিলতা হতে পারে, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে না পারলে চর্বি ভেঙে শক্তি উৎপন্ন করে এবং সেই প্রক্রিয়ায় রক্তে অ্যাসিড জমা হতে শুরু করে। এটি চিকিৎসা ছাড়া অবস্থায় জীবনঘাতী হতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে চোখ, কিডনি, স্নায়ু এবং হৃদযন্ত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তবে, ডায়াবেটিস দুই ধরনের হতে পারে— টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত অটোইমিউন সমস্যার কারণে হয়, যেখানে শরীর নিজেই অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলো ধ্বংস করে ফেলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স বা দেহের কোষগুলোর ইনসুলিন গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে হয়। তাই কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়? এই প্রশ্নটি টাইপ ১ এবং টাইপ ২ উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কারণ উভয় অবস্থাতেই মূল সমস্যা হলো ইনসুলিন ঘাটতি বা এর কার্যক্ষমতার অভাব। 

দেহে কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হয়? 

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগটি অ্যান্টিডায়ুরোটিক হরমোন (ADH) এর অভাব বা এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে হয়। এই হরমোনকে ভাসোপ্রেসিন নামেও পরিচিত। ADH কিডনিকে পানি শোষণে সাহায্য করে, যা প্রস্রাবের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন দেহে কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হয়, তখন শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ADH তৈরি করতে পারে না, অথবা কিডনি ADH এর প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দিতে পারে না। ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব হয়, যা দৈনিক ১৫-২০ লিটার পর্যন্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগটি কোন হরমোনের অভাবে হয় তা বোঝার জন্য রোগের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা জরুরি।

এই রোগের প্রধান কারণ হলো ADH এর অভাব বা কিডনির অক্ষমতা। এটি দুইভাবে হতে পারেঃ
১। সেন্ট্রাল ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসঃ যেখানে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেহে পর্যাপ্ত ADH উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
২। নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসঃ যেখানে কিডনি ADH এর প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দিতে পারে না।

এই অবস্থার লক্ষণগুলোতে দেখা যায় অত্যধিক তৃষ্ণা, বারবার প্রস্রাব হওয়া এবং ডিহাইড্রেশন। এটি ডায়াবেটিস মেলিটাস থেকে আলাদা, কারণ এতে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়। কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগ হয় তা নির্ণয়ের জন্য বিশেষ পরীক্ষা যেমন ইউরিন অসমোলালিটি টেস্ট এবং রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসার জন্য সাধারণত ডেসমোপ্রেসিন নামক ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা ADH এর কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এছাড়া নেফ্রোজেনিক টাইপের ক্ষেত্রে থায়াজাইড ডাইইউরেটিকস এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা হয়। এই রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান এবং ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। 

কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ হয়?

ডায়াবেটিস মেলিটাস একটি হরমোনজনিত রোগ, যা শরীরে ইনসুলিনের অভাব অথবা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ হয় – এই প্রশ্নের উত্তর হলো ইনসুলিন। ইনসুলিন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে নিঃসৃত হয়। এর প্রধান কাজ হলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। যখন শরীরে ইনসুলিনের অভাব দেখা দেয় অথবা ইনসুলিন তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারাতে শুরু করে, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস হয়।

ইনসুলিনের অভাবের কারণে ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগটি একটি জটিল বিপাকীয় রোগ হিসেবে পরিচিত। এটি শুধু রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে না, বরং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন – হৃদপিণ্ড, কিডনি, চোখ এবং স্নায়ুর ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস মেলিটাস হয়, তা জানা থাকলে রোগটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়। ডায়াবেটিস মেলিটাস হওয়ার পেছনে আরও কিছু কারণ থাকতে পারে, যেমন – জিনগত প্রভাব, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অতিরিক্ত ওজন এবং কম শারীরিক কার্যকলাপ।

ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ হয়। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এবং এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইনসুলিনের অভাব বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গেলে, কোষগুলি রক্ত থেকে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে না, ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস হয়। কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ হয়, তা জানা থাকলে রোগটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়। কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস মেলিটাস হয়, তা বোঝার মাধ্যমে আমরা সঠিক জীবনধারা অনুসরণ করতে পারি।

ডায়াবিটে চিকিৎসা কেন নিবেন?

আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী এবং আধুনিক সমাধান প্রদান করে। ডায়াবেটিস শুধু রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয় না, বরং এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। ডায়াবেটিসের ফলে নার্ভের ব্যথা ও দুর্বলতা, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিক ফুট এবং রক্ত সঞ্চালনের জটিলতা সৃষ্টি করে। এই সমস্যাগুলোর সমাধানে আমরা বিশেষায়িত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করি যা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিকে একত্রিত করে।

আমাদের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ওজন থেরাপি (ওজন গ্যাসের ব্যবহার), আকুপাংচার, ডায়াবেটিক ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক এনার্জি, পালস ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি এবং থেরাপিউটিক ব্যায়াম। এই পদ্ধতিগুলো একসঙ্গে কাজ করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, স্নায়ু সমস্যা কমায়, প্রদাহ হ্রাস করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আমরা প্রতিটি রোগীকে বিশেষভাবে দেখে তাদের অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করি। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু রোগ উপশম নয়, বরং রোগীদের সুস্থ, স্বাভাবিক এবং আনন্দময় জীবন ফিরিয়ে দেওয়া। আমাদের অত্যন্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসক দল আপনাকে সঠিক পথে গাইড করবে এবং চিকিৎসা প্রদানে সর্বোচ্চ যত্ন নিবে।

বিস্তারিত জানুন: ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খাওয়া উচিত

বিস্তারিত জানুন: টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর পার্থক্য

বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিস রেঞ্জ চার্ট ইন বাংলাদেশ

সাধারণ জিজ্ঞাসা

ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন, যা রক্তে থাকা শর্করাকে শরীরের কাজে লাগানোর জন্য সাহায্য করে। যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হাইপারগ্লাইসিমিয়া নামে পরিচিত।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন এক প্লেট ভাত খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ১১% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো চালের উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক, যা রক্তে চিনির মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। সাদা চালে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় এবং এই গ্লুকোজ ব্যবহারের জন্য ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী রুটি হলো যেটিতে কার্বোহাইড্রেট কম এবং ফাইবার বেশি থাকে। এই দুটি উপাদানের সমন্বয় রক্তে গ্লুকোজ শোষণের গতি কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে এবং স্থিরভাবে বাড়ে।

2 thoughts on “দেহে কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়?”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top