আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোন প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে, যার প্রত্যেকটির নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর মধ্যে ইনসুলিন একটি অত্যাবশ্যকীয় হরমোন, যা মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে, ইনসুলিনের ভূমিকা শুধু রক্তে শর্করা কমানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যার মধ্যে অন্যতম হলো কিটোজেনেসিস বা কিটোন বডির উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়া। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই অ্যান্টি কিটোজেনিক ইনসুলিনকে অনেক সময় অ্যান্টি ডায়াবেটিস হরমোন হিসেবেও অভিহিত করা হয়। কিন্তু অ্যান্টি কিটোজেনিক ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন? চলুন, আজকের ব্লগ পোস্টে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করবো এবং ইনসুলিনের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ইনসুলিন হরমোনের দুটি কাজ কি দিয়ে কোথায় তৈরি হয়?
ইনসুলিন হরমোন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন, যা রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অনেকেই জানতে চান ইনসুলিন হরমোনের দুটি কাজ কী? প্রথম কাজ হলো রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমানো এবং দ্বিতীয় কাজ হলো সেই গ্লুকোজকে লিভার ও পেশিতে জমা করে রাখা, যেন পরে দরকার হলে তা শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এখন প্রশ্ন হলো, ইনসুলিন কোথায় তৈরি হয়? ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্ন্যাশয়ে বা প্যানক্রিয়াসে, যেখানে বিটা কোষ নামে কিছু বিশেষ কোষ ইনসুলিন উৎপাদন করে। অনেকে আবার জানতে চান, ইনসুলিন কি দিয়ে তৈরি হয়? ইনসুলিন একটি প্রোটিন জাতীয় হরমোন যা অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে তৈরি হয়। তাই বোঝাই যায়, ইনসুলিন হরমোনের কাজ আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য কতটা দরকারি।
কোন খাবারে ইনসুলিন তৈরি হয়?
ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন, যা শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষে তৈরি হয়। কিছু মাছের শরীরেও এটি তৈরি হয়, যেটাকে ব্রকম্যানের অঙ্গ বলা হয়। সহজভাবে বললে, ইনসুলিন শরীরের এক বিশেষ জায়গা থেকে তৈরি হয় এবং এটি শুধু নির্দিষ্ট কিছু প্রাণীর মধ্যেই পাওয়া যায়।
ইনসুলিন একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ থেকে নিঃসৃত এই হরমোনের ঘাটতি ডায়াবেটিসের মূল কারণ। তবে কিছু প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে যা অগ্ন্যাশয়কে উত্তেজিত করে ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে। যেমন, লাল বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, করলা, মেথি বীজ, হলুদ, দারুচিনি এবং জারুল গাছের পাতা। এই খাবারগুলো অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষকে সক্রিয় করে, ফলে শরীর স্বাভাবিকভাবে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে ।
প্রশ্ন উঠতে পারে: কোন খাবারে ইনসুলিন তৈরি হয়? উত্তর হলো, মটরশুটি, মসুর ডাল, বাদাম, টফু ইত্যাদি উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শরীরে প্রাকৃতিক ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে। এছাড়া, করলা, ঢেঁড়স, মেথি বীজ, হলুদ এবং দারুচিনি অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ইনসুলিন নিঃসরণে সাহায্য করে । এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
অ্যান্টি ডায়াবেটিক হরমোন কাকে বলে এবং কেন?
ভ্যাসোপ্রেসিন (ইংরেজি: Vasopressin) হলো এক ধরনের হরমোন, যাকে ADH বা অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোনও বলা হয়। এটি আমাদের মস্তিষ্কের একটি অংশ থেকে তৈরি হয় এবং শরীরের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এই হরমোনের প্রধান কাজ হলো শরীরের ভেতরে পানি ধরে রাখা এবং রক্তনালিকে সংকুচিত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। সহজভাবে বললে, ভ্যাসোপ্রেসিন শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়া ঠেকায় এবং রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি ডায়াবেটিক হরমোন কাকে বলে? ইনসুলিন হরমোনকে অ্যান্টি ডায়াবেটিক হরমোন বলা হয়। এটি অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ (β-কোষ) থেকে নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কোষে গ্লুকোজ প্রবেশে সহায়তা করে, গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত করে যকৃৎ ও পেশীতে জমা রাখে (গ্লাইকোজেনেসিস প্রক্রিয়া)। এছাড়া এটি প্রোটিন ও চর্বি থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন বন্ধ করে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি ডায়াবেটিক হরমোন কাকে বলে এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইনসুলিন কোষে গ্লুকোজের দহন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে শক্তির উৎপাদন বাড়ায়। এটি হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ) রোধ করে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা রাখে। এই হরমোনের অভাব ঘটলে ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ সৃষ্টি হয়, যেখানে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পায়।
অ্যান্টি কিটোজেনিক হরমোন কাকে বলে এবং কেন?
অ্যান্টি কিটোজেনিক হরমোন কাকে বলে এবং কেন এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, ইনসুলিন হরমোনকে অ্যান্টি কিটোজেনিক হরমোন বলা হয়। কারণ, ইনসুলিন দেহে ফ্যাটের জারণ (অক্সিডেশন) প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় এবং এর ফলে দেহে কিটোন বডির উৎপাদন কমে যায়। কিটোন বডি হলো এমন কিছু রাসায়নিক যৌগ, যা সাধারণত ফ্যাট ভাঙার ফলে উৎপন্ন হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত কিটোন বডি জমা হলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইনসুলিন এই কিটোন বডির উৎপাদন রোধ করে বলে একে অ্যান্টি কিটোজেনিক হরমোন বলা হয়।
অ্যান্টি কিটোজেনিক হরমোন কাকে বলে এবং কেন এই বিষয়ে আরও বলা যায়, ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। যখন ইনসুলিনের ঘাটতি হয়, তখন শরীর শক্তির জন্য ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে, এতে কিটোন বডির উৎপাদন বেড়ে যায়। তাই ইনসুলিনের উপস্থিতি কিটোন বডির উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং শরীরকে কিটোসিস থেকে রক্ষা করে। এজন্যই ইনসুলিনকে অ্যান্টি কিটোজেনিক হরমোন বলা হয়।
ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন?
ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন? কারণ যখন শরীরে ইনসুলিনের অভাব দেখা দেয়, তখন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। এই অবস্থাকেই আমরা ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হিসেবে জানি। ইনসুলিনের অভাবে কোষগুলো প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়, কারণ গ্লুকোজ রক্তে থাকলেও কোষে প্রবেশ করতে পারে না। এর ফলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে শুরু করে।
ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন? কারণ ইনসুলিন রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ থেকে আমাদের রক্ষা করে। যখন আমরা শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করি, তখন তা হজম হয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তে মেশে। এই সময় ইনসুলিন নিঃসৃত হয় এবং রক্ত থেকে গ্লুকোজকে লিভার, পেশী এবং অন্যান্য টিস্যুতে পৌঁছে দেয়। লিভার এবং পেশী কোষে অতিরিক্ত গ্লুকোজ গ্লাইকোজেন নামক একটি সঞ্চিত রূপে জমা থাকে, যা প্রয়োজনে শক্তি সরবরাহ করতে পারে। ইনসুলিনের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন? কারণ ইনসুলিনের উপস্থিতি যকৃৎ (লিভার) এবং পেশীকলায় গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন তৈরির প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। যদি ইনসুলিন না থাকত বা যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি না হত, তাহলে এই গ্লুকোজ গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত হতে পারত না এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকত, যা ডায়াবেটিসের দিকে ধাবিত করত।
ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন? কারণ এটি ডায়াবেটিস রোগের প্রধান প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ডায়াবেটিস মূলত ইনসুলিনের অভাব বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে হয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, যেখানে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায় (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স) এবং প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। উভয় ক্ষেত্রেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন? কারণ ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়, অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ নির্গত হতে শুরু করে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রস্রাবে গ্লুকোজ থাকে না। কিন্তু যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে (রেনাল থ্রেশোল্ড), তখন কিডনি আর সম্পূর্ণ গ্লুকোজ শোষণ করতে পারে না এবং তা প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। এটি ডায়াবেটিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন? কারণ এটি রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং দেহের কোষে গ্লুকোজের প্রবেশ নিশ্চিত করে। যদি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং কার্যকরী ইনসুলিন থাকে, তবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কোষগুলো প্রয়োজনীয় শক্তি পায়। এর ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
ইনসুলিন কে এন্টি ডায়াবেটিস হরমোন বলে কেন? কারণ ইনসুলিন ছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগীদের জীবনধারণের জন্য নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্পের মাধ্যমে শরীরে ইনসুলিন সরবরাহ করতে হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অনেক রোগীকেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইনসুলিন থেরাপির সাহায্য নিতে হয়।
ডায়াবিটে চিকিৎসা কেন নিবেন?
আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা দূর করার জন্য একটি আধুনিক, কার্যকর এবং বৈজ্ঞানিক সমাধান প্রদান করে। আমরা নার্ভের ব্যথা ও দুর্বলতা, কিডনি সমস্যা, বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস, ডায়াবেটিক ফুট, এবং রক্ত সঞ্চালনের জটিলতার মতো সমস্যার উন্নত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। আমাদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ওজন থেরাপি (ওজন গ্যাস), আকুপাংচার, ডায়াবেটিক ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক এনার্জি, পালস ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি এবং থেরাপিউটিক ব্যায়ামের মতো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পদ্ধতি। এই আধুনিক ও সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো ডায়াবেটিসের জটিলতা কমিয়ে রোগীদের স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করে।
বিস্তারিত জানুন: অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয়
বিস্তারিত জানুন: বহুমূত্র রোগ কি? কোন হরমোনের অভাবে বহুমূত্র রোগ হয়?
বিস্তারিত জানুন: বাচ্চাদের বা শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট ও এর লক্ষন
বিস্তারিত জানুন: দেহে কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়
Dr. Saiful Islam, PT, is a Consultant Physiotherapist with expertise in Orthopedics. He holds a BPT from Dhaka University, an MPT, and a Postgraduate Certification in Acupuncture from India, with specialized training in Ozone Therapy.