যোগাযোগ করুন

০১৯৮৮৮৯৯৯৩৬

শনিবার -শুক্রবার

সকাল ৯টা - রাত ৯টা

বাচ্চাদের বা শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট ও এর লক্ষন

বাচ্চাদের বা শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট ও এর লক্ষন

বাচ্চাদের বা শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট ও এর লক্ষন এই বিষয়টি নিয়ে অনেক বাবা-মা বেশ চিন্তিত থাকেন। আমাদের আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব। শিশুদের ডায়াবেটিস কী, এর স্বাভাবিক মাত্রা কত হওয়া উচিত এবং কী কী লক্ষণ দেখলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, সেই সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।

শিশুদের ডায়াবেটিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা তাদের দৈনন্দিন জীবন এবং ভবিষ্যতের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। তাই, বাচ্চাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান রাখা প্রত্যেক বাবা-মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। চলুন, আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট ও এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে।

শিশুদের ডায়াবেটিস এর প্রকারভেদ

শিশুদের ডায়াবেটিস এর প্রকারভেদ

শিশুদের ডায়াবেটিস বলতে সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিসকেই বোঝানো হয়, তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং নবজাতক বা নিওনেটাল ডায়াবেটিসও হতে পারে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে শিশুর অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ বা ব্যাহত হয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত বড়দের হলেও, বর্তমানে শিশুদের মধ্যেও এটি বাড়ছে, বিশেষ করে স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে। নবজাতক বা নিওনেটাল ডায়াবেটিস সাধারণত জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, যা একটি নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন বা ত্রুটির কারণে হয়। এটি অনেক সময় সাময়িক (ট্রানজিয়েন্ট) হতে পারে, আবার স্থায়ী (পার্মানেন্ট) ডায়াবেটিসেও রূপ নিতে পারে।

শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এবং বয়সভিত্তিক রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা

শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এবং বয়সভিত্তিক রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা

শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এই জিজ্ঞাসাটি প্রায়শই উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েদের মুখে শোনা যায়। সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন প্রতিটি অভিভাবকের মনে এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। বয়সের ভিন্নতার সাথে সাথে শিশুদের রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রায় কিছু পরিবর্তন আসে, তাই এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন বয়স গ্রুপের শিশুদের জন্য ফাস্টিং সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা নিচে উল্লেখ করা হলো, যা শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এবং বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়ক হবে।

ছয় বছর বয়সের ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ একেবারে শৈশবে, ফাস্টিং বা খালি পেটে রক্তে শর্করার মাত্রা ৮০ থেকে ১৮০ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটারের (mg/dL) মধ্যে থাকা উচিত। এই বয়সকালে শিশুদের শারীরিক কার্যকলাপ এবং খাদ্যাভ্যাসের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে এই সীমার কিছুটা বিস্তার দেখা যায়।

যখন শিশুরা ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যে পদার্পণ করে, তখনও তাদের ফাস্টিং সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা মোটামুটি একই রকম থাকে, অর্থাৎ ৮০ থেকে ১৮০ মিলিগ্রাম/ডিএল-এর মধ্যেই থাকা বাঞ্ছনীয়। এই বয়সে শিশুরা স্কুলে যাওয়া শুরু করে এবং তাদের দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আসে।

কিশোর বয়সে, অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ফাস্টিং সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা কিছুটা পরিবর্তিত হয় এবং তা ৭০ থেকে ১৫০ মিলিগ্রাম/ডিএল এর মধ্যে থাকা উচিত। এই সময়কালে হরমোনের পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার ভিন্নতার কারণে এই নতুন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ২০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য ফাস্টিং সুগারের ক্ষেত্রে আরও কঠোর মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় এবং তা সাধারণত ১০০ মিলিগ্রাম/ডিএল এর নীচে থাকাটাই স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়। 

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষণ অনেক সময় খুব স্পষ্ট নাও হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত –

  • অতিরিক্ত পিপাসা লাগা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব
  • অস্বাভাবিক ক্ষুধা এবং ওজন হ্রাস
  • শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়া
  • দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, ঘন ঘন বমি বা পেটের পীড়া
  • শরীরে ঘা হলে সহজে না শুকানো
  • শিশুদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, স্কুল পারফরম্যান্স খারাপ হওয়া

অনেক সময় বাচ্চাদের ডায়াবেটিসে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না, বা বাবা-মা খেয়াল করেন না। ফলে অনেক শিশুই প্রথম অবস্থাতেই খিঁচুনি, পেটব্যথা, পানিশূন্যতা বা অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

নবজাতকের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

নবজাতকের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

নবজাতকের ডায়াবেটিস, যা কিনা সাধারণত জন্মের পরবর্তী প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করে থাকে, একটি বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। এই স্পর্শকাতর সময়ে একটি নবজাতকের রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত ৪৫ থেকে ১২৫ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটারের (mg/dL) মধ্যে থাকা অত্যাবশ্যক। যদি কোনো কারণে এই স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করে, অর্থাৎ রক্তে শর্করার পরিমাণ ১২৫ মিলিগ্রাম/ডিএল-এর বেশি স্থিতিশীলভাবে বজায় থাকে, তখন নবজাতকের ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা জোরালো হয় এবং দ্রুততার সাথে বিষয়টি আমলে নেওয়া প্রয়োজন। এই অবস্থার কিছু সুস্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে যা অভিভাবকদের সচেতন করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রস্রাব করা, অস্বাভাবিকভাবে ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া, শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেওয়া, অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হ্রাস পাওয়া এবং বাচ্চার স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া। নবজাতকের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই রোগের প্রভাব শিশুর স্নায়বিক এবং শারীরিক বিকাশের উপর সুদূরপ্রসারী ও নেতিবাচক হতে পারে। অবহেলা করলে শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই, নবজাতকের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে কোনো প্রকার বিলম্ব না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

শিশুদের ডায়াবেটিসের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর

শিশুদের ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ হলো জেনেটিক বা বংশগত কারণ, অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া, পরিবেশগত ফ্যাক্টর, এবং কখনো কখনো ভাইরাল সংক্রমণ। টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত অটোইমিউন কারণে হয়, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজেই ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস করে ফেলে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হয়।

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য সাধারণত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা হয়। যদি শিশুর রক্তে ফাস্টিং গ্লুকোজ ১২৬ মিলিগ্রাম/ডিএল বা তার বেশি হয়, তাহলে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এছাড়া, র‍্যান্ডম ব্লাড সুগার ২০০ মিলিগ্রাম/ডিএল বা তার বেশি হলে এবং সাথে ডায়াবেটিসের লক্ষণ থাকলে ডায়াবেটিস নিশ্চিত ধরা হয়।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন থেরাপি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ডায়েট, ব্যায়াম, ওষুধ এবং ইনসুলিন সবকিছুই ব্যবহৃত হতে পারে। নবজাতকের ডায়াবেটিসে জেনেটিক টেস্টিং এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি, কারণ কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিনের পরিবর্তে সুলফোনাইলইউরিয়া ওষুধে ভালো ফল পাওয়া যায়।

শিশুদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

শিশুদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব না হলেও, টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এই বিষয়গুলো কার্যকর। এছাড়া, পরিবারের মধ্যে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে শিশুদের নিয়মিত চেকআপ করা উচিত।

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ও করণীয়

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ও করণীয়

শিশুদের ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কিডনি, চোখ, স্নায়ু ও হৃদরোগসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই বাচ্চাদের ডায়াবেটিস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, চিকিৎসকের পরামর্শ, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত জরুরি।

উপসংহার

শিশুদের ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট, বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, নবজাতকের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, এবং বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এর লক্ষণ এসব বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই এই ব্লগের উদ্দেশ্য। বাবা-মা হিসেবে শিশুদের ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতন থাকা, নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা, এবং কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শিশুদের ডায়াবেটিস এখন আর অজানা বা অব্যবস্থাপিত রোগ নয়-সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব।

ডায়াবিটে চিকিৎসা কেন নিবেন

ডায়াবিটে চিকিৎসা কেন নিবেন?

আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি ডায়াবেটিসের জটিলতা দূর করতে একটি কার্যকর এবং সম্পূর্ণ সমাধান প্রদান করে। নার্ভের ব্যথা ও দুর্বলতা, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিক ফুট, এবং রক্ত সঞ্চালনের জটিলতার মতো সমস্যার জন্য আমরা সেবা প্রদান করি। ওজন থেরাপি (ওজন গ্যাসের ব্যবহার), আকুপাংচার, ডায়াবেটিক ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক এনার্জি, পালস ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি, এবং থেরাপিউটিক ব্যায়ামের মতো আধুনিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পদ্ধতিগুলোর সমন্বয়ে আমাদের চিকিৎসা। এই সমন্বিত পদ্ধতিগুলো ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে এবং রোগীদের স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবন ফিরে পেতে সাহায্য করে। প্রতিটি রোগীর জন্য ব্যক্তিগতকৃত এবং যত্নশীল চিকিৎসা নিশ্চিত করে আমরা সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদান করি।

বিস্তারিত জানুন: কোন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়?

বিস্তারিত জানুন: কোন হরমোনের অভাবে বহুমূত্র রোগ হয়?

বিস্তারিত জানুন: টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর পার্থক্য

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top